অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে পারছেন না। তবে তাদের দেশে ফেরাতে এবার উদ্যোগ নিয়েছে দূতাবাস।
সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের যারা শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ, কোম্পানি থেকে এক্সিট নিয়ে চূড়ান্তভাবে দেশে ফিরতে চান বা পারিবারিক জরুরি প্রয়োজনে দেশে ফিরতে চান তাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করছে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস।
আগামী ২০ জুন (সম্ভাব্য তারিখ) সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে ও ১ জুলাই পর্যন্ত জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ বিমানের দুটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বলে জানিয়েছে দূতাবাস।
এই ফ্লাইটে যাত্রীদের নিজ খরচে দেশে ফিরতে পারবেন। তবে দেশে ফিরতে চাইলে দূতাবাসে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন লিংক: https://bit.ly/2Yx6Hhc এছাড়া দূতাবাসের ওয়েবসাইট এবং অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, সৌদি আরবে প্রায় ২১ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে। অনেকেই জরুরি পারিবারিক প্রয়োজনে দেশে ফিরতে চান। অনেক অসুস্থ প্রবাসী রয়েছেন। এখানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অনেক ছাত্র দেশে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। অনেকে ভিজিট ভিসায় এসে দেশে ফিরে যেতে পারছে না। আমরা সবার কথা ভেবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, অনেকে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে চাকরি শেষে ফাইনাল এক্সিট ভিসা নিয়ে দেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার একটি রিয়াদ থেকে ও আরেকটি জেদ্দা বিমান বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে।
রাষ্ট্রদূত জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে। রেজিস্ট্রশনকারীদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে ফোন করে রিয়াদের জন্য ৪০০ জন ও জেদ্দার জন্য ৪০০ জন প্রবাসীকে টিকিট ক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেয়া হবে। পরবর্তীতে আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে অন্যদের ক্রমানুসারে ফোন করা হবে।
বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রিয়াদ-ঢাকা একমুখী যাত্রার টিকিটের মূল্য ইকোনোমি ক্লাস ২৮০০ সৌদি রিয়াল ও বিজনেস ক্লাস ৩৮০০ সৌদি রিয়াল নির্ধারণ করেছে। জেদ্দা-ঢাকা বিমানের একমুখী যাত্রার টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ইক্নোমি ক্লাসের জন্য ৩০৩০ সৌদি রিয়াল ও বিজনেস ক্লাস ৪০৩০ সৌদি রিয়াল।
রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, বাংলাদেেইশ পাসপোর্টধারীরা যারা দূতাবাসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করবেন শুধু তারাই ওই বিমানে ভ্রমণ করতে পারবেন। যাত্রীরা সৌদি আরবের বাংলাদেশ বিমানের নির্দিষ্ট অফিস থেকে টিকিট ক্রয় করবেন।
করোনায় আক্রান্ত নন বা কোনো উপসর্গ নেই এ মর্মে সৌদি কর্তৃপক্ষ-কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট বিমানে প্রবেশের পূর্বে প্রত্যেক যাত্রীকে অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ঢাকায় অবতরণের পর বিমান বন্দরে তা জমা দিতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত সংগণিরোধ (Quarantine) সম্পর্কিত সকল সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। প্রত্যেক যাত্রীকে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য-বিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য প্রবাসীদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেদ্দা ও রিয়াদস্থ রিজিওনাল অফিসের সাথে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। রিয়াদ এর জন্য ০৫০৪২৪৬৩৫২ ও ০৫৬ ৯৬৪ ১৮২৪ এই নম্বরে ও জেদ্দার জন্য ০৫৫ ৮৮৭ ২৫৮০ ও ০৫০ ৫৬১ ৮২১৩ এই নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রায় তিন মাস লকডাউন থাকার পর অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে সৌদি আরবের জনজীবন। দীর্ঘদিন পর গৃহবন্দি থাকা প্রবাসীরা ফিরতে শুরু করেছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে। অনেকদিন পর বাইরে বের হতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করছেন তারা।
গেলো মার্চের দুই তারিখ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় সৌদি আরবে। ১৪ মার্চ থেকে কয়েক দফায় প্রায় তিন মাস লকডাউন শেষে গত ২৮ মে থেকে কারফিউয়ের সময়সীমা সাময়িক শিথিলের ঘোষণা দেয় সৌদি সরকার। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চালু, কর্মীদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া এবং মসজিদ খুলে দেয়াসহ দেশের অভ্যন্তরে এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াতের ওপরও নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর অনেকগুলো আইন জারি করেছে সৌদি সরকার। মাস্ক পরা ছাড়া কেউ বাইরে গেলে হাজার রিয়াল জরিমানা ও নিজ দেশে পাঠানোর বিধান রেখেছে এ আইনে। আগামী ২১ শেষ জুন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশ্বাস দিয়েছে সৌদি সরকার। এখন কর্মস্থলের লোকসমাগম একটু কম হলেও ধীরে ধীরে তা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রবাসীরা।
এর আগে সৌদি আরবে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগী এবং করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ছিল আশঙ্কাজনক।
তবে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস মনে করছে অন্য দেশের অভিবাসীদের তুলনায় সেখানে বাংলাদেশিদের আক্রান্ত হওয়ার হার কিছুটা বেশি হলেও তা অস্বাভাবিক বা আশঙ্কাজনক নয়।
সৌদি আরবের সরকারি হিসেব অনুযায়ী ২৫ মে পর্যন্ত সেখানে করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ১০ হাজার ৯০৫ জন বলে জানিয়েছিলেন সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৭ জন বাংলাদেশি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তাদের হিসেবে নিশ্চিতভাবে করোনা আক্রান্ত এই ৮৭ জনের পাশাপাশি গত তিন মাসে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে সৌদি আরবে মারা গেছে মোট ২২৪ জন বাংলাদেশি।
রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, সৌদি আরবে প্রায় ২২ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। সেই অনুপাতে যদি চিন্তা করেন তাহলে যেই পরিমাণ বাংলাদেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই হার খুব একটা আশঙ্কাজনক নয়। এখানকার বাংলাদেশিদের অধিকাংশের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বা সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। বেশি সংখ্যক বাংলাদেশির আক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ সেটি হতে পারে।